ঋতু
মিনতি সরকার
প্রাক্তনী, বাংলা বিভাগ
সাপট গ্রাম মহাবিদ্যালয়
সূর্যের চলমানতায়-
চলে আসে পৃথিবীর পঞ্চভূতের আধারে
সময়ের নির্ধারিত পথ দিয়ে
ঋতুর সঞ্চারণ।
উদ্বাস্তুদের ছাউনী ছুঁয়ে, রাজমহল পেরিয়ে,
নোংরা ডোবা ছাড়িয়ে মহাসাগর-
অপক্ষপাত ঋতুর বিচরণ গ্রীষ্মের দাবদাহে শুকিয়ে যাওয়া সব শিরা-উপশিরায়
ভেসে আসে ভাটিয়ালী সিক্ত সুর,
বর্ষার জলের স্রোতে।
শরতের শিশির মেখে
শিউলী জেগে উঠে।
হেমন্ত ভরিয়ে দেয় চাষীদের প্রাণ ,
সোনালী ধানের ফসলে।
শীতের মিঠেল দুপুর প্রতীক্ষায় বসে থাকে
বসন্তের অনুরাগের কামনায়।
জীন, শীর্ণ, ধূলিমাখা স্নায়ু সব
বদলে যায় ঋতুর-
স্বভাবজাত ভাবনায় ।
শৈশব
সুস্মিতা নাগ .
স্নাতক পঞ্চম সান্মাসিক
হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলা
ডাকছে আমায় পিছু ,
স্মৃতির পাতায় অতীতের ছবি
গাঁথা আছে শুধু।
ছোট বেলার নানান স্মৃতি
উঁকি মেরে বলে -
আয় একবার ফিরে যাই
শিশুদের দলে।
ফেলে আসা শৈশব আজ
হারিয়ে গেছে কোথায়!
সকল গ্লানি কেটে যাবে যদি
ফিরে পাওয়া যায়।
বৃষ্টি
শুভম রায়
স্নাতক চতুর্থ সান্মাসিক
বৃষ্টি নামে আপন ছন্দে,
মেঘের আঁকা গানে।
পথিক চাতক তাকিয়ে আছে
নব-বর্ষার টানে।
টাপুর টুপুর ঝরছে জল
সবুজ পাতার গালে।
ডাহুকিরা সব ডাকছে দেখো
বৃষ্টির তালে তালে।
বৃষ্টি শেষে সোনা রোদে,
রাঙিয়ে দেবে দিন।
সকল প্রাণের সাড়া জাগবে
নতুন-নবীন।
রায়বাঘিনী মাহাত্ম্য
~অনুশোত্তমী
চৌধুরী দীননাথের রূপবতী পুত্রী ইষ্ট মা ভবানী,
শৌর্যবতী সুলক্ষ্মনা যুবতী কূললক্ষ্মী ব্রাহ্মণী ।
শর্তানুসারে বীরচিত্ত রুদ্ররাজ এককোপে তিন দিয়ে বলিদান,
পাণিগ্রহন করিয়া পাটরানীয়রূপে নিজ মহলে লইয়া যান।
পতিব্রতা নারী সর্বকার্য্যে সুদক্ষ সমান,
সুলগ্নে সুপুত্র জন্ম দিয়া দ্বিজবংশের রাখিলেন মান।
হেনকালে ধর্ম্মযুদ্ধে মহারাজা রুদ্রনারায়ণ নিহত অকস্মাৎ,
ভগ্নহৃদয়া রানী শোকবিলাপে করে দিনপাত ।
সংযত চিত্তে ভট্টাচার্য্য কূলগুরুর উপদেশ জানিয়া,
শৈবদীক্ষা শুদ্ধ রানী ধর্ম্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার ভার কাঁধে নিয়া ।
সুবিস্তৃত সাম্রাজ্যের অধিপতি হইবার গুরুদায়িত্ব স্বীকারিল,
তান্ত্রিক আগম মতে রানীর পূর্ণাভিষেক সম্পন্ন হইল ।
রাজা শূন্য রাজ্য রাণী বহিছেন ভার ,
সুশৃঙ্খল শাসনে করেন সাম্রাজ্য বিস্তার।
চক্রবর্তী চতুর্ভুজ রাজদ্রোহী সেনাপতি,
সঙ্গে যোগ দিল উৎকলের পাঠান দলপতি ।
সমরকুশলা বীরাঙ্গনা মহা শক্তিশালিনী ভবশঙ্করী,
জয় দূর্গা হইতে প্রাপ্ত করিল এক আশ্চর্য তরবারি।
বিপদের ছদ্মবেশে আসিল কঠিন লগ্ন,
করিতে রাণীর ভূরিশ্রেষ্ঠ ক্ষেত্র ভগ্ন।
ভবশঙ্করী মহারাণী সাজিয়া সমরবস্ত্রে,
ধ্বংস করেন পাঠান সেনা মারণীয় অস্ত্রে।
আতঙ্কিত স্বীয় সৈন্যদের দিয়ে আশ্বাস,
রণচণ্ডী রুদ্রাগ্নি অস্ত্রে করিল শত্রু বিনাশ।
বঙ্গীয় যোদ্ধাদের আঘাতে বার বার,
ওসমান খানের সৈন্য হৈল ছারখার।
যুদ্ধে রণরঙ্গীনির ভয়ঙ্কর মূর্তি দর্শনে,
ওসমান খান যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিলেন গোপনে ।
যবন পাঠান দের দিয়ে রক্তাহুতি রণে,
"রায়বাঘিনী" নামে বাঙ্গালায় চিনিল জনে জনে।
আফগান আক্রমনকে করিয়া নিষ্ফল,
রাণীর জয় পতাকা হৈল স্বর্ণজ্বল।
বিজয় স্মরণে মহারাণী করিলেন হোম,
সাম্রাজ্যে ঘোষিত কণ্ঠ 'বন্দেহরবিন্দশ্রিয়ম' ।
ইহা দিল্লিশ্বর আকবরের গোচর হৈল,
মানে সিংহকে তিনি ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রেরন করিল।
উপাধি-উপহারাদি ভেঁট স্বরূপ দিয়া সম্মান,
স্বদেশের স্বাধীনতা ও শান্তি অক্ষুন্ন থাক ইহা রাণী চান।
শাস্ত্রসম্পন্না জিতেন্দ্রিয়া প্রজাহিতে তৎপর,
রাজধর্ম প্রচারে হৈলেন অগ্রসর।
নানা সুপন্ডিত ও পাঠশালা করিলেন নির্মাণ,
রুদ্রেশ্বরের বিগ্রহ করুনাময়ী করিল প্রতিষ্ঠান।
ভূরিশ্রেষ্ঠ সিংহাসনে অভিষেক করিয়া পুত্র প্রতাপনারায়ণে,
মহারাণী রাজপাঠে লইয়া বিরতি, মহাযাত্রা কাশীগমনে।
আমার বাবা
জয়া রায়
স্নাতক চতুর্থ সান্মাসিক
বাবা আমার ভীষণ কঠিন,
যায় না তাকে বোঝা,
কষ্টগুলো চেপে রেখে
করে হাসি-মজা।
নিজেকে নিয়ে খামখেয়ালির
নেইকো তার শেষ,
বাবাকে ছাড়া শূণ্য যেন
আমার দেশ-বিদেশ।
দিনশেষে ক্লান্তবেশে যখন
বাবা ঘরে ফিরে,
খুঁজে পাই আমি সকল সুখ
আমাদের কুটিরে।
বাংলা
সিয়া দাস
প্রাক্তন ছাত্রী
বাংলা আমার মাতৃধন
ভাইয়ের রক্তে রাঙা,
বাংলা আমার হৃদয় তুমি
সকল ভাষার সেরা।
বাংলা আমার ভোরের উঠোনে
সেজে ওঠা আলপনা,
বাংলা আমার হৃদয় পাতায়
পদাবলীর সুরে বাঁধা।
বাংলা আমার ভরা শ্রাবণে
মনসামঙ্গলের পালা,
বাংলা আমার রাঙা মাঠে
বাউল গানের শোভা।
বাংলা আমার 'চর্যা' মাঝে
সাড়ে-ছেচল্লিশ পদে গাঁথা,
বাংলা আমার মাতৃরূপে
সরলতার প্রতিমা।
গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও
স্নেহা সাহা
স্নাতক পঞ্চম বর্ষ
“গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও”
বলবো কত আর
সবাই মিলে গাছ লাগিয়ে
প্রাণ বাঁচাবো এবার।
একটি গাছ, একটি প্রাণ
বুঝবে সবাই কবে,
গাছ লাগালে দেশ বাঁচবে
সুখে থাকবে সবে।
পরিবেশ দূষণ যদি
কম করতে চাও,
যত্ন করে সবে মিলে
একটি গাছ লাগাও।
গাছেরও যে প্রাণ আছে
ভুলে গেছো কি তুমি?
তবে কেনো গাছ কেটে
গড়ছো মরুভূমি।
গাছ লাগাবো, প্রাণ বাঁচাবো
করবো এই পণ।
গাছ লাগিয়ে গড়বো মোরা
সুন্দর ভুবন।
বাহ্যিকতা
কৌশিক মিত্র
স্নাতক পঞ্চম সান্মাসিক
একটু একটু করে জমেছে
হাজার মিথ্যে প্রত্যাশার স্তূপ।
কণায় কণায় পূর্ণ প্রতিজ্ঞার মলাট।
তরমুজের সাদা রং, নারকেলে কালো জল,
কিংবা কাঁকরের চাল–
সবটাই জানে ভোক্তারা।
তবুও ডাকাত আজ রঙ্গমঞ্চের জমিদার।
যে বসেছে, আধ ঘন্টার সিংহাসনে।
ঢেকেছে সব বালিয়াড়িতে।
গোলাপ হোক কিংবা গন্ধরাজ
সকলেই তার দাস।
দিনমনির আলোয় পুড়ছে সব
কাঁদছে কবিতায় নিঃস্ব চাঁদ।
আম গাছে আজও ঝুলছে পুরোনো নীল শাড়ির দোলনা,
খুলে ফেলা হয়নি এখনও।
সব বাহ্যিকতা, হাত পাল্লার কম-বেশি।